রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮

আল্লাহ দৈহিক আকৃতি থেকে পূতঃ পবিত্র

আল্লাহ পাকের দৈহিক আকার আছে? নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দৈহিক আকার আকৃতি থেকে সম্পূর্নরুপে পবিত্র। যদি ধরা হয় দৈহিক আকৃতি আছে তাহলে প্রশ্ন আসে সেই দেহের কাজ কি? ক্ষুধা লাগলে খেতে হবে, পরিশ্রম করলে ক্লান্তি আসবে, তন্দ্রা হবে, ঘুম আসবে, জৈবিক চাহিদা পূরন করার প্রয়োজন হবে, তখন সন্তান সন্তুতি জন্ম নিবে। এসব কিছু দেহের সাথে সম্পৃক্ত। যেহেতু আল্লাহ পাক ক্ষুধা, ক্লান্তি, তন্দ্রা, ঘুম, জৈবিক চাহিদা, জন্ম দেয়া থেকে পূতঃ পবিত্র তাই আল্লাহ দৈহিক আকৃতি থেকেএকবারে পবিত্র। আল্লাহ পাক ষ্পষ্ট বলে দিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দৈহিক আকার আকৃতি থেকে সম্পূর্নরুপে পূতঃ পবিত্র। قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (১) اللَّهُ الصَّمَدُ (২) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (৩) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ “হে রাসূল সাঃ আপনি ঘোষনা/প্রকাশ দিয়ে দেন তিনিই আল্লাহ একক অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারো সন্তান নন। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” অতএব আল্লাহর দৈহিক আকার আকৃতি আছে এ কথা বিশ্বাস করা যাবে? কুরআনের কিছু কিছু আয়াতের বাংলা অর্থ পড়ে অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। যা ঈমানের দূর্বলতার লক্ষন। যেমন,

সূরা আররাহমানের ২৭ নং আয়াতে কারীমার মধ্যে আল্লাহ বলেন, كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ “সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে আর শুধু থাকবে আপনার রবের সত্ত্বা, যিনি মহত্ত্ব ও দয়ার অধিপতি।” এখন কেউ কেউ আয়াতের وَجْهُ শব্দটির অর্থ করে চেহারা, মুখমন্ডল। যদি চেহারা অর্থ ধরা হয় তাহলে আয়াতের অর্থ কি দাড়ায়? সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে আর শুধু থাকবে আপনার রবের মুখমন্ডল। তার অর্থ হলো হাত, পা, দেহ, শক্তি সব শেষ থাকবে শুধু চেহারা। এই অর্থ কি সঠিক হলো? এটা সম্পূর্নরুপে ভুল। এই অর্থ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ পাক কুরআনের অন্যত্র বলেন,  كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ “আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল।” এখানেও যদি চেহারা ধরা অর্থ কি হবে আল্লাহর চেহারা ব্যতীত সব ধ্বংষশীল। এরকম অর্থ করা যাবে? তাহলে وَجْهُ কি অর্থ করতে হবে? মুহাম্মদ সায়্যেদ তানত্বাবী তাফসীরে ওসীতের মধ্যে লিখেন,  ويبقى وَجْهُ رَبِّكَ اى وذاته بقاء অর্থাৎ আল্লাহর জাত বা সত্ত্বাকে বুঝানো হয়েছে। অতএব আল্লাহ পাক দৈহিক আকৃতি থেকে পূত পবিত্র, নিরাকার। এ কথা যে বিশ্বাস করবে না সে কাফের হয়ে যাবে।

শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮

ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ এর ব্যাখ্যা

ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ দ্বারা কেউ কেউ মনে করেন আল্লাহ আরশে সমাসীন, বসে আছেন, অধিষ্ঠিত আছেন। এ কথার মাধ্যমে আল্লাহকে সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং আল্লাহর একটি আকৃতি প্রদান করা হয়, যার ফলে আল্লাহর পূত পবিত্রতাকে অস্বীকার করা হয়ে যায়। যা সম্পূর্নরুপে শিরক। আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা কুফুরী। এজন্য তাফসীরে ইবনে কাছীরের মধ্যে আল্লামা ইবনে কাছীর লিখেন, من شبه الله بخلقه فقد كفر، ومن جحد ما وصف الله به نفسه فقد كفر" “যে ব্যাক্তি আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করল সে কুফুরী করল আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর নিজস্ব গুনকে অস্বীকার করল সেও কুফুরী করল।” যারা আল্লাহকে আরশে সমাসীন মনে করেন তাদের দলীল  ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ “অতপর আল্লাহ আরশে ইসতাওয়া করেছেন।” ইসতাওয়ার বাংলা অর্থ করে বসা, সমাসীন হওয়া। কিন্ত আরবী অভিধানের কোথাও বসা অর্থ করা হয় নাই। معجم المعانى الجامع  এর মধ্যে اسْتَوَى অর্থ এসছে, استولى র্কতৃত্ব করা। অতএব সঠিক অর্থ হবে অতপর আল্লাহ আরশের র্কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। আরশ আল্লাহর সৃষ্টি তাই সৃষ্টি কোন দিন স্রষ্টাকে ধারন করতে পারে না। আর রিসালাতুল কুশাইরিয়্যার মধ্যে এসছে, জা’ফর আস সাদিক রাহঃ বলেন, যে ভাবে/মনে/বিশ্বাস করে আল্লাহ কোন কিছুর মধ্যে, কোন কিছু থেকে উদ্ভুত, অথবা কোন কিছুর উপরে তবে সে শিরক করলো। আল্লাহ আরশে সমাসীন, বসে আছেন, অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন এ কথা বিশ্বাস করা যাবে না।