শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক কেন?

আসছে ঈদুল ফিতর আর শুরু হতে যাচ্ছে ঈদের নামাযের তাকবির সংখ্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত কিছু তাকবির দিতে হয়। কেউ বলেন ছয় তাকবির কেউ বার তাকবির বলে থাকেন। উভয়ে তাদের স্বপক্ষে জোরালো দলীল পেশ করে। একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টায় পিছিয়ে থাকার নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় আলেমদের এ ধরনের ঘৃন্য আচরন ইসলামের সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তবুও কেন আমরা এই বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছি।
ইমাম আবু হানিফার ফতোয়া মতে, দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরীমার পর ছানা পাঠ করে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে। এরপর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ে রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ে পুনরায় অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে চতুর্থ তকবির বলে রুকূতে যাবে। এ হিসাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা হয় ছয়টি। এ প্রসঙ্গে উনার দলীল রাসূল সাঃ এর হাদীস যা সহীহ সূত্রে মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, মু’জামুল কাবীর এর মধ্যে এসছে, فقال بن مسعود يكبر أربعا ثم يقرا ثم يكبر فيركع ثم يقوم في الثانية فيقرا ثم يكبر أربعا بعد القراءة “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলে, চারটি তাকবির দেয়া হবে এরপর কিরাত পড়বে রুকু করবে পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ার পর চারটি তাকবির দিবে।” উল্লেখ্য প্রথম রাকাতে চার তাকবিরের ব্যাখ্য তাকবিরে তাহরীমা সহ অতিরিক্ত তিনটি তাকবির। আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার তাকবির সহ আরো তিনটি তাকবির। মোট দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির।

অপরদিকে কারো কারো মতে, দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা বার। তাদের দলীল হচ্ছে হাসান সূত্রে বর্নিত তিরমীযি ও ইবনে মাজা শরীফের হাদীস أن النبي صلى الله عليه و سلم كبر في العيدين في الأولى سبعا قبل القراءة وفي الآخرة خمسا قبل القراءة “রাসূল সাঃ দুই রাকাত ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতে কিরাত পড়ার পূর্বে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচটি তাকবির দিতেন।” 

বার তাকবিরের পক্ষের কিছু আলেম অত্যন্ত কঠোর ভাবে হুশিয়ারি করেন যে, ছয় তাকবিরের পক্ষে একটি জয়ীফ হাদীস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমান দেখাতে পারবে না। অথচ ছয় তাকবিরের পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান (উপোরোক্ত হাদীস)। শুধু তাই নয় বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর উপর আমল করেছেন। তাহলে তাদের বক্তব্য কি উক্ত হাদীসকে অস্বীকার করার শামিল নয়? যা সম্পূর্নরুপে কুফুরী।

উমদাতুল ফিকহ এর ২য় খন্ডে এসছে ঈদের নামাযের দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলার স্থলে ইমাম যদি আরো বেশী সংখ্যক তাকবীর বলেন তাহলে তেরবার পর্যন্ত ইমামের অনুসরন করা হবে। যদি তের বারের অধিক বলা হয় তাহলে ইমামের ভুল বলে পরিগনিত হবে। তাতে ইমামের অনুসরন করা হবে না। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ঈদের নামায ছয় তাকবির দিয়ে আদায় করলে যেমন শুদ্ধ হবে তেমনি বার তাকবির দিয়ে আদায় করলেও ভুল হবে না। তাই ফিতনা হতে বিরত থেকে যেখানে ইমাম যেভাবে আদায় করেন সেভাবে আদায় করা সর্বোত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা

ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই। রাসূল সাঃ বৈরাগ্যবাদকে নিষিদ্ধ করেছেন। তাই বলে কি ইসলামে তাসাউফ সাধনা তথা আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য কোন প্রচেষ্টার ব্যবস্থা নেই? কুরআন প্রমান দিচ্ছে আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى () وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى  “সেই ব্যক্তি সফলকাম যে পরিশুদ্ধতা অর্জন করেছে। নামায আদায়ের পাশাপাশি তার রবের যিকির করে।” আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য যিকিরের সাধনার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا () نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا “উঠ রাত্রি জাগরন করো কিছু অংশ, অর্ধরাত্রি অথবা তদাপেক্ষা অল্প।” প্রবৃত্তির বিরোধীতা করে শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে ইবাদতে মগ্ন হতে যে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানেও তাসাউফ সাধনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ইসলামে তাসাউফের সাধনা আছে। যদি কেউ বলে থাকে ইসলামে আত্মশুদ্ধির সাধনার কোন স্থান নেই তাহলে ইসলামকে অপূর্ন হিসেবে আখ্যায়িত করল। কেননা আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজ আমি পরিপূর্ন করেছি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম)। ” আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ন ক্রটিমুক্ত। অতএব এ ধরনের কথা বলার কোন সুযোগ নেই। এটি নেহায়েত কুফুরীর শামিল। 

অন্যান্য ইবাদতের (নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত) মত ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা। উপরোক্ত আয়াতগুলি থেকে বুঝা যায় প্রত্যাহিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে রাতের অন্ধকারে একান্ত তাঁরই ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে তাসাউফ সাধনার যেভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তেমনি বছরে একবার রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ঘরে নিজেকে বন্দী রেখে অহোরাত্র তারই দ্বারে পড়ে থেকে দুনিয়াবী কলুষতা থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ই’তিকাফ বলা হয়। রমজানের দিনের বেলায় স্ত্রী সম্ভোগ নিষিদ্ধ হলেও রাতের বেলায় নিষিদ্ধ নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় দিনে রাতে সদা সর্বদা তা নিষিদ্ধ। এ থেকে প্রমানিত হয় ই’তিকাফকারীর জন্য দুনিয়াবী চিন্তা চেতনা ও পার্থিব কর্তব্য পালন নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ “তোমরা ই’তিকাফ অবস্থায় নারীদের কাছে গমন করিও না।” সংসার সংশ্রব থেকে নিজেকে পৃথক করে মসজিদে সর্বক্ষন আল্লাহর দাসত্বে নিযুক্ত থাকতে হবে। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করা যাবে। কিন্তু  একে মোটেও নির্জনবাস বলা যায় না। কেননা এটি পাড়ার জামে মসজিদে করতে হয়। 

দুনিয়ার মুহাব্বত অন্তর থেকে বের করার প্রশিক্ষন নেয়ার সূবর্ন সুযোগ হলো ই’তিকাফ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পাক যাতের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন হয়। তামাম সৃষ্টির ভালোবাসার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের সঙ্গে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সকল বাধন ছিন্ন করে একমাত্র তাঁরই ধ্যানে ডুবে থাকা যায়। এজন্য রাসূল সাঃ ইচ্ছাকৃতভাবে ই’তিকাফ পরিত্যাগ করেন নি। তাই আমাদেরও উচিত রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। 

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?সিয়াম ও তারাবীহ পরস্পর সম্পূরক। একই বিষয়ের এপিঠ-ওপিঠ। সিয়াম ভোগ বিলাস ত্যাগের দিকে আহবান করে। তারাবীহ তথা নামায আল্লাহর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করে। তাই রমযান মাসে সিয়াম সাধনার পাশপাশি তারাবীহের নামায আদায় করতে হবে এ বিষয়ে সকল ওলামায়ে কেরামগন ঐক্যমত। কিন্তু বির্তকের বিষয় হলো তারাবীহের নামাযের কত রাকাত? ৮ রাকাত না ২০ রাকাত। এর উপর ভিত্তি করে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে মতবিরোধ। প্রত্যেকেই তাদের মতের উপর অবিচল। সাধারন মানুষের প্রশ্ন এই বির্তকের অবসান কোথায়?

যারা আট রাকাত নামাযের পক্ষে তারা দলীল পেশ করে থাকেন বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাতুত তারাবীহ এর যে মধ্যে হাদীসটি এসছে সেটি, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্নিত তিনি আয়েশা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন রমযান মাসে (রাতে) রাসূল সাঃ এর নামায কেমন ছিল? আয়েশা রাঃ জবাব দিলেন, ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة “রামযানে এবং রমযান ব্যতীত অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী পড়তেন না।” এ হাদীসের ভাষ্যই প্রমান করছে এটি তারাবীর নামাযের দলীল নয়। কেননা রমযানের বাইরে তারাবীহ নেই। অপরদিকে যারা বিশ রাকাত নামাযের পক্ষে তাদের দলীল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত হাদীস। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা এর কিতাবুস সালাত এর মধ্যে এসছে, عن بن عباس إن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة والوتر “ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত রাসূল সাঃ রমাদান মাসে বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।” এখন প্রশ্ন কত রাকাত পড়া যুক্তিযুক্ত।

এক জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহের নামায আদায়ের প্রচলন শুরু হয় হযরত উমর রাঃ এর খিলাফত কাল থেকে। তিনি উবাই ইবনে কা’ব রাঃকে ইমাম নির্দিষ্ট করে এই জামাত শুরু করেন। অবশ্যই উনি নিজের পক্ষ থেকে এটি আবিষ্কার করেন নি। তাঁর সাথে বিদ্যমান কোন মূল দলীলের ভিত্তিতে রাসূল সাঃ এর নিকট থেকে অবগতির সূত্রেই তা করেছিলেন। কেননা তৎকালীন সময়ের রাসূল সাঃ সাহাবীগনের কেউ এ বিষয়ে অসম্মতি প্রকাশ করেন নি। পরবর্তী যুগের খলিফাগন, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, মুজতাহিদ ইমামগন তা অবনত চিত্তে মেনে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এও বলেছেন খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরনীয়। عليكم بسنتى و سنة الخلفاء الراشدين المهديين عضو عليها بالنواجذ “তোমরা আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরন করবে তা মজবুত করে আকড়ে ধরবে।” তাই জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায়ের প্রসঙ্গে কোন প্রকার সন্দেহ করা চরম মূর্খতার শামিল হবে।

আল্লাহ তাআলা রমযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন আর রাসূল সাঃ রাতে তারাবীহ পড়া চালু করেছেন। একে কিয়ামুল লাইলও বলা হয়। রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল এর গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে রাসূল সাঃ বলেন من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه “যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাত্রি যাপন (কিয়ামুল লাইল) করবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” কিয়ামুল লাইল দ্বারা রাতের সকল নামাযকেই বুঝায় যেমন নফল ও সুন্নাত। ফলে তাহাজ্জুদের নামাযও এর অর্ন্তভূক্ত হয়ে যায়। তাই বলে তাহাজ্জুদের নামায আর তারাবীহের নামায এক বিষয় নয়। উভয়টি পৃথক পৃথক নামায। উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামুল লাইল দ্বারা তারাবীহের নামায বুঝানো হয়েছে। এরকম মর্যাদার বর্ননা শুধুমাত্র তারাবীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। রমযান মাসে যেহেতু সকল আমলের সওয়াব অনেক বেশী তাই তারাবীহের নামায বিশ রাকাত পড়াই উত্তম। 

পরিশেষে বলা যায়, বিশ রাকাত নামাযের মধ্যে আট রাকাত আছে কিন্তু আট রাকাত নামাযের মধ্যে বিশ রাকাতের উপস্থিতি নেই। তাই বিশ রাকাত না আট রাকাত এই বিরোধীতা না করে রমযানের সময় সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলের আমলকে কবুল করে নিন। আমীন।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

আল্লাহর ওলীদের পরিচয় পাওয়া সহজ না কঠিন ?

আউলিয়া শব্দটি ওলিয়্যুন শব্দের বহুবচন। সাধারন প্রচলিত ব্যবহারে এই শব্দটির অর্থ সহচর, বন্ধু। যেমন আল্লাহ বলেন, أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ “জেনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোন ভয় নাই তাদের কোন চিন্তা নাই।”
সাধারনভাবে সকল মু’মিনগন স্ব স্ব স্তরে আল্লাহর বন্ধু। এদের মধ্যে কিছু কিছু ওলীগন বেলায়াতপ্রাপ্ত। তাঁরা রাসূল সাঃ এর আদর্শ ও চরিত্রের প্রকৃত পদানুসারী। তাঁরা দ্বীন ইসলামের খাদেম। তাদের জন্য নিজস্ব মতাদর্শ মতবাদ প্রচার করা কুফুরী। কুরআন স্বাক্ষী আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “তোমাদের জন্যে রাসূল সাঃ এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ” তাই যারা আল্লাহর বেলায়াত বা নৈকট্য পেতে চায় তাদেরকে অবশ্যই রাসূল সাঃ এর আদর্শকে গ্রহন করতে হবে। তদুপরি যারা শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী স্বীয় কোন মতবাদ প্রচার করে তাহলে তাদের বেলায়াত থাকতে পারে না। কেননা আল্লাহ বলেন, الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ  “বেলায়াত দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।” আর রাসূল সাঃ এর পাইরুবি না করলে আল্লাহ বেলায়াত দান করেন না।
রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও তার আনুগত্যের মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর মুহাব্বত অর্জন করা যায় না। কেননা আল্লাহ ঘোষনা করেন,  إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ قُلْ “হে রাসূল আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরন করো আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।” অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, যারা আল্লাহর নৈকট্যশীল বন্ধু তাঁরা আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিক এবং রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের প্রকৃত অনুসরন অনুকরনকারী। উভয়ের ভালোবাসা তাদের অন্তরে বিদ্যমান। তাই সূক্ষ্মভাবে বলা যায় এই রকম মর্যাদা সম্পন্ন ওলীদেরকে অনুসরন, অনুকরন ও আনুগত্য করলে প্রকারান্তরে রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও আনুগত্য হয়। এরাই হলো ওরাছাতুল আম্বীয়া বা নবী রাসূলদের প্রকৃত উত্তরসূরী।
পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যত নবী রাসূল প্রেরন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন সার্বজনীন। তাঁরা জনসাধারনের নিকট স্বীয় পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং মু’জিযা দেখানো তাঁদের জন্য দূষনীয় ছিল না। অপরদিকে যারা আল্লাহর নিকটবর্তী অলী তাদের পরিচয়ের কোন বাহ্যিক চি‎হ্ন রাখেন নাই। এজন্য এ সমস্ত অলীদের পরিচয় লাভ করা বড়ই কঠিন। আল্লাহ তাঁর কোন কোন ওলীকে বহু কারামত দিয়েছেন, আবার কাউকে আংশিক কারামতের অধিকারী করেছেন। অন্যদিকে কাউকে আবার সম্পূর্নরুপে কারামত থেকে মুক্ত রেখেছেন। এটি একেবারেই আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত। সাথে সাথে এও বিধান করেছেন যে, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে স্বেচ্ছায় কারামত প্রকাশ করা অবৈধ। 
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ওলামায়ে কেরামদের মতে, আউলিয়াদের কারামত সত্য। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সূরা আলে ইমরানের ৩৭ নং আয়াত দলীল হিসেবে পেশ করা যায়। মারইয়াম আঃ এর অলৌকিকতা বর্ননা করে আল্লাহ বলেন হযরত যাকারিয়া আঃ যখনই মারইয়াম আঃ এর ঘরে প্রবেশ করতেন তখনই তাঁর নিকট অসময়ের ফল তথা গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালে আর শীতকালের ফল গ্রীষ্মকালে দেখতে পেতেন। কুরআনে বর্নিত আছে, لَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّى لَكِ هَذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ “যখনই যাকারিয়া তাঁর ঘরে প্রবেশ করতো তখনই তাঁর নিকট খাদ্যসম্ভার দেখতে পেত, তিরি ডেকে বলতেন হে মারইয়াম এটা কোথা থেকে প্রাপ্ত হলে। সে বলতো এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।” এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইবনে কাছীর লিখেন এটাই আল্লাহর অলীদের কারামতের দলীল। কিন্তু এক শ্রেনীর আলেম ঢালাওভাবে আউলিয়াদের কারামতকে ভ্রান্ত, ভেল্কিবাজী, যাদু ও প্রতারনা নামে আখ্যায়িত করে থাকে। এটি সত্যকে অস্বীকার করার শামিল। 
আউলিয়াদের কারামত সত্য হলেও ওলী পরিচয়ের প্রধান চিহ্ন হতে পারে না। আল্লাহর নৈকট্যশীল প্রকৃত আউলিয়াদের অন্তর শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মা’রেফাতের জ্ঞানে পরিপূর্ন। তাঁরা রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরনকারী। আল্লাহর তাওহীদের নূরে তাদের অন্তর নূরান্বিত। তাঁরা আল্লাহর রহমত ও ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত বান্দা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট তাঁরা মুখাপেক্ষী নয়। তাঁদের অন্তর সদা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত তাই তাদেরকে দর্শন মাত্রই আল্লাহর স্মরন হয়। তাঁদের সংস্পর্শ গ্রহন করলে দুনিয়ার মায়া হ্রাস পায়। আখেরাতের কথা হৃদয়ে জাগরিত হয়। আমলের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। তাঁদেরকেই প্রচলিত অর্থে পীর, মুর্শিদ, সূফী, দরবেশ নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا “অতপর তারা সাক্ষাত পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের যাকে আমি আমার দিয়েছিলাম রহমত এবং ইলমে লাদুন্নী।” (সূরা কাহাফ ৬৫) তাদের সংস্পর্ষ, শিক্ষা দীক্ষা, তা’লিম তরবিয়াত ও দোয়া নিতে পারলেই আল্লাহর নিকটবর্তী বন্ধুদের কাতারে শামিল হওয়া সম্ভব। কেননা আল্লাহ বলেন وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ “নিজেকে তুমি রাখবে তাদের সংস্পর্শে যারা সকাল সন্ধ্যা তাদের রবকে ডাকে।” (সূরা কাহাফ ২৮) এই সংস্পর্ষ গ্রহন করার অপর নাম বাইয়াত। এর লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও বন্ধুত্বের স্থান দখল করা।