বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা

ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই। রাসূল সাঃ বৈরাগ্যবাদকে নিষিদ্ধ করেছেন। তাই বলে কি ইসলামে তাসাউফ সাধনা তথা আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য কোন প্রচেষ্টার ব্যবস্থা নেই? কুরআন প্রমান দিচ্ছে আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى () وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى  “সেই ব্যক্তি সফলকাম যে পরিশুদ্ধতা অর্জন করেছে। নামায আদায়ের পাশাপাশি তার রবের যিকির করে।” আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য যিকিরের সাধনার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا () نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا “উঠ রাত্রি জাগরন করো কিছু অংশ, অর্ধরাত্রি অথবা তদাপেক্ষা অল্প।” প্রবৃত্তির বিরোধীতা করে শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে ইবাদতে মগ্ন হতে যে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানেও তাসাউফ সাধনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ইসলামে তাসাউফের সাধনা আছে। যদি কেউ বলে থাকে ইসলামে আত্মশুদ্ধির সাধনার কোন স্থান নেই তাহলে ইসলামকে অপূর্ন হিসেবে আখ্যায়িত করল। কেননা আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজ আমি পরিপূর্ন করেছি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম)। ” আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ন ক্রটিমুক্ত। অতএব এ ধরনের কথা বলার কোন সুযোগ নেই। এটি নেহায়েত কুফুরীর শামিল। 

অন্যান্য ইবাদতের (নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত) মত ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা। উপরোক্ত আয়াতগুলি থেকে বুঝা যায় প্রত্যাহিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে রাতের অন্ধকারে একান্ত তাঁরই ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে তাসাউফ সাধনার যেভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তেমনি বছরে একবার রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ঘরে নিজেকে বন্দী রেখে অহোরাত্র তারই দ্বারে পড়ে থেকে দুনিয়াবী কলুষতা থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ই’তিকাফ বলা হয়। রমজানের দিনের বেলায় স্ত্রী সম্ভোগ নিষিদ্ধ হলেও রাতের বেলায় নিষিদ্ধ নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় দিনে রাতে সদা সর্বদা তা নিষিদ্ধ। এ থেকে প্রমানিত হয় ই’তিকাফকারীর জন্য দুনিয়াবী চিন্তা চেতনা ও পার্থিব কর্তব্য পালন নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ “তোমরা ই’তিকাফ অবস্থায় নারীদের কাছে গমন করিও না।” সংসার সংশ্রব থেকে নিজেকে পৃথক করে মসজিদে সর্বক্ষন আল্লাহর দাসত্বে নিযুক্ত থাকতে হবে। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করা যাবে। কিন্তু  একে মোটেও নির্জনবাস বলা যায় না। কেননা এটি পাড়ার জামে মসজিদে করতে হয়। 

দুনিয়ার মুহাব্বত অন্তর থেকে বের করার প্রশিক্ষন নেয়ার সূবর্ন সুযোগ হলো ই’তিকাফ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পাক যাতের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন হয়। তামাম সৃষ্টির ভালোবাসার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের সঙ্গে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সকল বাধন ছিন্ন করে একমাত্র তাঁরই ধ্যানে ডুবে থাকা যায়। এজন্য রাসূল সাঃ ইচ্ছাকৃতভাবে ই’তিকাফ পরিত্যাগ করেন নি। তাই আমাদেরও উচিত রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন