বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

আল্লাহর ওলীদের পরিচয় পাওয়া সহজ না কঠিন ?

আউলিয়া শব্দটি ওলিয়্যুন শব্দের বহুবচন। সাধারন প্রচলিত ব্যবহারে এই শব্দটির অর্থ সহচর, বন্ধু। যেমন আল্লাহ বলেন, أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ “জেনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোন ভয় নাই তাদের কোন চিন্তা নাই।”
সাধারনভাবে সকল মু’মিনগন স্ব স্ব স্তরে আল্লাহর বন্ধু। এদের মধ্যে কিছু কিছু ওলীগন বেলায়াতপ্রাপ্ত। তাঁরা রাসূল সাঃ এর আদর্শ ও চরিত্রের প্রকৃত পদানুসারী। তাঁরা দ্বীন ইসলামের খাদেম। তাদের জন্য নিজস্ব মতাদর্শ মতবাদ প্রচার করা কুফুরী। কুরআন স্বাক্ষী আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “তোমাদের জন্যে রাসূল সাঃ এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ” তাই যারা আল্লাহর বেলায়াত বা নৈকট্য পেতে চায় তাদেরকে অবশ্যই রাসূল সাঃ এর আদর্শকে গ্রহন করতে হবে। তদুপরি যারা শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী স্বীয় কোন মতবাদ প্রচার করে তাহলে তাদের বেলায়াত থাকতে পারে না। কেননা আল্লাহ বলেন, الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ  “বেলায়াত দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।” আর রাসূল সাঃ এর পাইরুবি না করলে আল্লাহ বেলায়াত দান করেন না।
রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও তার আনুগত্যের মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর মুহাব্বত অর্জন করা যায় না। কেননা আল্লাহ ঘোষনা করেন,  إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ قُلْ “হে রাসূল আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরন করো আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।” অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, যারা আল্লাহর নৈকট্যশীল বন্ধু তাঁরা আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিক এবং রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের প্রকৃত অনুসরন অনুকরনকারী। উভয়ের ভালোবাসা তাদের অন্তরে বিদ্যমান। তাই সূক্ষ্মভাবে বলা যায় এই রকম মর্যাদা সম্পন্ন ওলীদেরকে অনুসরন, অনুকরন ও আনুগত্য করলে প্রকারান্তরে রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও আনুগত্য হয়। এরাই হলো ওরাছাতুল আম্বীয়া বা নবী রাসূলদের প্রকৃত উত্তরসূরী।
পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যত নবী রাসূল প্রেরন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন সার্বজনীন। তাঁরা জনসাধারনের নিকট স্বীয় পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং মু’জিযা দেখানো তাঁদের জন্য দূষনীয় ছিল না। অপরদিকে যারা আল্লাহর নিকটবর্তী অলী তাদের পরিচয়ের কোন বাহ্যিক চি‎হ্ন রাখেন নাই। এজন্য এ সমস্ত অলীদের পরিচয় লাভ করা বড়ই কঠিন। আল্লাহ তাঁর কোন কোন ওলীকে বহু কারামত দিয়েছেন, আবার কাউকে আংশিক কারামতের অধিকারী করেছেন। অন্যদিকে কাউকে আবার সম্পূর্নরুপে কারামত থেকে মুক্ত রেখেছেন। এটি একেবারেই আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত। সাথে সাথে এও বিধান করেছেন যে, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে স্বেচ্ছায় কারামত প্রকাশ করা অবৈধ। 
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ওলামায়ে কেরামদের মতে, আউলিয়াদের কারামত সত্য। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সূরা আলে ইমরানের ৩৭ নং আয়াত দলীল হিসেবে পেশ করা যায়। মারইয়াম আঃ এর অলৌকিকতা বর্ননা করে আল্লাহ বলেন হযরত যাকারিয়া আঃ যখনই মারইয়াম আঃ এর ঘরে প্রবেশ করতেন তখনই তাঁর নিকট অসময়ের ফল তথা গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালে আর শীতকালের ফল গ্রীষ্মকালে দেখতে পেতেন। কুরআনে বর্নিত আছে, لَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّى لَكِ هَذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ “যখনই যাকারিয়া তাঁর ঘরে প্রবেশ করতো তখনই তাঁর নিকট খাদ্যসম্ভার দেখতে পেত, তিরি ডেকে বলতেন হে মারইয়াম এটা কোথা থেকে প্রাপ্ত হলে। সে বলতো এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।” এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইবনে কাছীর লিখেন এটাই আল্লাহর অলীদের কারামতের দলীল। কিন্তু এক শ্রেনীর আলেম ঢালাওভাবে আউলিয়াদের কারামতকে ভ্রান্ত, ভেল্কিবাজী, যাদু ও প্রতারনা নামে আখ্যায়িত করে থাকে। এটি সত্যকে অস্বীকার করার শামিল। 
আউলিয়াদের কারামত সত্য হলেও ওলী পরিচয়ের প্রধান চিহ্ন হতে পারে না। আল্লাহর নৈকট্যশীল প্রকৃত আউলিয়াদের অন্তর শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মা’রেফাতের জ্ঞানে পরিপূর্ন। তাঁরা রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরনকারী। আল্লাহর তাওহীদের নূরে তাদের অন্তর নূরান্বিত। তাঁরা আল্লাহর রহমত ও ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত বান্দা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট তাঁরা মুখাপেক্ষী নয়। তাঁদের অন্তর সদা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত তাই তাদেরকে দর্শন মাত্রই আল্লাহর স্মরন হয়। তাঁদের সংস্পর্শ গ্রহন করলে দুনিয়ার মায়া হ্রাস পায়। আখেরাতের কথা হৃদয়ে জাগরিত হয়। আমলের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। তাঁদেরকেই প্রচলিত অর্থে পীর, মুর্শিদ, সূফী, দরবেশ নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا “অতপর তারা সাক্ষাত পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের যাকে আমি আমার দিয়েছিলাম রহমত এবং ইলমে লাদুন্নী।” (সূরা কাহাফ ৬৫) তাদের সংস্পর্ষ, শিক্ষা দীক্ষা, তা’লিম তরবিয়াত ও দোয়া নিতে পারলেই আল্লাহর নিকটবর্তী বন্ধুদের কাতারে শামিল হওয়া সম্ভব। কেননা আল্লাহ বলেন وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ “নিজেকে তুমি রাখবে তাদের সংস্পর্শে যারা সকাল সন্ধ্যা তাদের রবকে ডাকে।” (সূরা কাহাফ ২৮) এই সংস্পর্ষ গ্রহন করার অপর নাম বাইয়াত। এর লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও বন্ধুত্বের স্থান দখল করা।

1 টি মন্তব্য: