শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক কেন?

আসছে ঈদুল ফিতর আর শুরু হতে যাচ্ছে ঈদের নামাযের তাকবির সংখ্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত কিছু তাকবির দিতে হয়। কেউ বলেন ছয় তাকবির কেউ বার তাকবির বলে থাকেন। উভয়ে তাদের স্বপক্ষে জোরালো দলীল পেশ করে। একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টায় পিছিয়ে থাকার নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় আলেমদের এ ধরনের ঘৃন্য আচরন ইসলামের সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তবুও কেন আমরা এই বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছি।
ইমাম আবু হানিফার ফতোয়া মতে, দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরীমার পর ছানা পাঠ করে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে। এরপর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ে রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ে পুনরায় অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে চতুর্থ তকবির বলে রুকূতে যাবে। এ হিসাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা হয় ছয়টি। এ প্রসঙ্গে উনার দলীল রাসূল সাঃ এর হাদীস যা সহীহ সূত্রে মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, মু’জামুল কাবীর এর মধ্যে এসছে, فقال بن مسعود يكبر أربعا ثم يقرا ثم يكبر فيركع ثم يقوم في الثانية فيقرا ثم يكبر أربعا بعد القراءة “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলে, চারটি তাকবির দেয়া হবে এরপর কিরাত পড়বে রুকু করবে পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ার পর চারটি তাকবির দিবে।” উল্লেখ্য প্রথম রাকাতে চার তাকবিরের ব্যাখ্য তাকবিরে তাহরীমা সহ অতিরিক্ত তিনটি তাকবির। আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার তাকবির সহ আরো তিনটি তাকবির। মোট দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির।

অপরদিকে কারো কারো মতে, দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা বার। তাদের দলীল হচ্ছে হাসান সূত্রে বর্নিত তিরমীযি ও ইবনে মাজা শরীফের হাদীস أن النبي صلى الله عليه و سلم كبر في العيدين في الأولى سبعا قبل القراءة وفي الآخرة خمسا قبل القراءة “রাসূল সাঃ দুই রাকাত ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতে কিরাত পড়ার পূর্বে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচটি তাকবির দিতেন।” 

বার তাকবিরের পক্ষের কিছু আলেম অত্যন্ত কঠোর ভাবে হুশিয়ারি করেন যে, ছয় তাকবিরের পক্ষে একটি জয়ীফ হাদীস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমান দেখাতে পারবে না। অথচ ছয় তাকবিরের পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান (উপোরোক্ত হাদীস)। শুধু তাই নয় বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর উপর আমল করেছেন। তাহলে তাদের বক্তব্য কি উক্ত হাদীসকে অস্বীকার করার শামিল নয়? যা সম্পূর্নরুপে কুফুরী।

উমদাতুল ফিকহ এর ২য় খন্ডে এসছে ঈদের নামাযের দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলার স্থলে ইমাম যদি আরো বেশী সংখ্যক তাকবীর বলেন তাহলে তেরবার পর্যন্ত ইমামের অনুসরন করা হবে। যদি তের বারের অধিক বলা হয় তাহলে ইমামের ভুল বলে পরিগনিত হবে। তাতে ইমামের অনুসরন করা হবে না। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ঈদের নামায ছয় তাকবির দিয়ে আদায় করলে যেমন শুদ্ধ হবে তেমনি বার তাকবির দিয়ে আদায় করলেও ভুল হবে না। তাই ফিতনা হতে বিরত থেকে যেখানে ইমাম যেভাবে আদায় করেন সেভাবে আদায় করা সর্বোত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন