বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬

ইসলাম কি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচারিত?


ইসলাম এক সার্বজনীন ধর্ম। রাসূল সাঃকে পাঠানো হয়েছে সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত স্বরুপ। ইসলামের মূলমন্ত্র হলো সাম্য, সহিষ্ণুতা এবং সৌভ্রাতৃত্ব। সাম্যের চিরন্তন বানী হলো ইসলামের শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য। সৌভ্রাতৃত্বের অন্তরঙ্গ আবেদন এর প্রাণস্বরুপ। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার ইসলামের সৌন্দর্য।

ইসলাম ধর্ম কোন প্রকার ভয় ভীতি প্রদর্শন তথা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচারিত হয় নি। অমানিশার অন্ধকারে যেমন পতঙ্গরাজি কোন অজানিত টানে প্রজ্জলিত দীপালোকের দিকে ছুটে আসে, তেমনি সত্য-সনাতন ইসলামের জ্যেতি ও উদারতা ধর্মান্বেষী মানব মাত্রেই প্রানকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিল। ঘটনাচক্রের আর্বতনে মুসলমানগণকে বহু যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু এটা স্থির নিশ্চিত যে, কাউকেও বলপূর্বক মুসলমান করা এই সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহের উদ্দেশ্যে মোটেই ছিল না। এই যুদ্ধবিগ্রহকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা অবৈধ জঙ্গী তৎপরতা বলার কোন সুযোগ নেই। এটি রাষ্ট্রীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক গৃহিত পদক্ষেপ। ধরাপৃষ্ঠে এমন কোন জাতির উপমা নেই যারা রাষ্ট্রীয় জীবন রক্ষা করতে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয় নি অথবা অন্ততঃপক্ষে যুদ্ধবিগ্রহ সমর্থন করে না। ইসলামে যুদ্ধ তথা জিহাদের নীতিমালা স্থান পাওয়ার কারন এটি পরিপূর্ন ধর্ম। আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ন করে দিলাম।” তাই মানব জীবনে যত রকম অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে তৎসমুদয়ের সুস্পষ্ট ব্যবস্থাই ইসলামে রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হলো জঙ্গীবাদ। কতিপয় জঙ্গী সংগঠন ইসলাম প্রতিষ্ঠার ধোঁয়া তুলে জিহাদের নামে যে অবৈধ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা ইসলাম সমর্থিত নয়। এটি সম্পূর্ন তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা এবং বিকৃত মানসিকতার উদ্ভাবিত ফসল। যা দেশ ও জাতির নিরাপত্তাকে বিঘিœত করছে। এই পদ্ধতিতে কর্ষিকালেও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা ইসলামে সন্ত্রাস মহাপাপ। পিতা পুত্র, স্বামী স্ত্রী, মালিক ভৃত্য, এবং মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা প্রমান করে সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ব শান্তি  প্রতিষ্ঠা ও তা বজায় রাখাই এ সকল বিধি বিধানের মৌলিক উদ্দেশ্য। রাসূল সাঃ বলেছেন, المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده “প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ।” এ রকম মহান আদর্শ দিয়েই রাসূল সাঃ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

জেনে রাখা প্রয়োজন জিহাদ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত। এটি নিয়ম তান্ত্রিক পদ্ধতি মুতাবেক পরিচালিত হয়। জিহাদের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব ইমামুল মুসলিমীন তথা মুসলিম খেলাফতের খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সকল রাষ্ট্রেই গনতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। ইসলামের খেলাফত তন্ত্র ধরাপৃষ্ঠের কোথাও অবশিষ্ট নেই। বিধায় জিহাদের উদ্যোগ নেয়ার মত কোন খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান নেই। এমতবস্থায় জিহাদ পরিচালনা করবে কে? তাই যে সকল সংগঠন জিহাদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সম্পূর্নরুপে অবৈধ। কোন একক সংগঠনের অস্ত্রের মাধ্যমে জিহাদ পরিচালনা করার অধিকার ইসলাম দেয় নাই। কারন রাসূল সাঃ মক্কী জীবনে একটি যুদ্ধও পরিচালনা করেন নি। সকল যুদ্ধ মদীনার রাষ্ট্র গঠন করার পরে সংগঠিত হয়।

তদুপরি স্বচ্ছ ধারনার অভাবে কেউ কেউ রাসূল সাঃ এর পরিচালিত কিছু যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনায় লিপ্ত হন। তেমনি একটি হলো বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ। তাদের প্রশ্ন রাসূল সাঃ কেমন করে বনু মুস্তালিকের উপর অতর্কিত হামলা করে তাদের সকল যোদ্ধাসহ পুরুষদেরকে হত্যা করে ফেললেন। এটা কি সন্ত্রাসী হামলা নয়? উত্তরে বলা যায় ইসলামের জিহাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো মুসলিম বাহিনীর বিপক্ষে কোন শক্তি যদি অস্ত্রধারন করতে ইচ্ছা পোষন করে তাহলে প্রথমত তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে। যদি তারা সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে দ্বিতীয়ত কর প্রদান করত মুসলামানদের সাথে চুক্তি করতে আহবান করা হবে। যদি তাতেও সম্মত না  হয়ে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে চায় তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, فَإِنْ قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ “যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো।” বনু মুস্তালিকের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাদের কাছে পূবেই ইসলামের সকল দাওয়াত পৌছে গিয়েছিল। রাসূল সাঃ জানতে পারেন হারিছ ইবনে আবূ যিরারের নেতৃত্বে বনূ মুস্তালিক গোত্র মুসলমানদের দাওয়াত অস্বীকার করে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই রাসূল সাঃ ৫ম হিজরী সনে ০২ শাবান ৭০০ সাহাবী নিয়ে বনূ মুস্তালিকের অভিমুখে রওয়ানা হয়ে অতর্কিত হামলা করার নির্দেশ করেন তাতে তাদের সকল ব্যাক্তি নিহত হয়। তাই এই আক্রমনকে সন্ত্রাসী হামলা বলার কোন সূযোগ নেই।

ইসলামের তাত্ত্বিক দর্শন এবং এর ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকে দৃষ্টিপাত করলে এ কথা সূর্যালোকের মতো সুস্পষ্ট যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সন্ত্রাস, ভীতি প্রদর্শন ও জোর জবরদস্তীর কোন স্থান নেই। যার প্রমান মিলে স্বামী বিবেকানন্দের লেখনীতে। তিনি লিখেন, “[ভারতে] মুসলিম শাসনের নিকট আমরা ঋনী। মুসলিম শাসন এসেছিল এক মহান আর্শীবাদ রুপে। কোন কোন গোষ্ঠীর উপভোগকৃত সুযোগ সুবিধার ধ্বংসকারীরুপে। [ভারতের] দরিদ্র এবং দলিতদের মুক্তিবার্তা নিয়েই মুসলমানদের ভারত বিজয় সংঘটিত হয়েছিল। এ কারনেই ভারতের এক পঞ্চমাংশ জনসমষ্টি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। তরবারীর ভুমিকা এক্ষেত্রে ছিল গৌণ। কেউ যদি বলেন এ জন্য দায়ী তরবারী এবং আক্রমন তাহলে তা হবে মস্ত পাগলামী।”

1 টি মন্তব্য: