বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

শানে রেসালাত প্রেক্ষিত রাসূল সাঃ এর মর্যাদা



আল্লাহ পাক পৃখিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরন করেছিলেন তাদের মধ্যে কাউকে কোন একটি দেশের জন্যে আবার কেউ কোন একটি সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াতের দায়িত্ব সহ প্রেরিত হয়েছেন। কিন্তু মুহাম্মদ সাঃকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, আল্লাহর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল আলোরুপে প্রেরন করেছিলেন। এবং তাঁকে দান সীমাহীন মর্যাদা। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে নিজের প্রশংসা করতে গিয়ে এমন কিছু গুনবাচক নাম বর্ননা করেছেন যেগুলো রাসূল সাঃ এর প্রশংসা করতে গিয়ে ব্যবহার করা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ “তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি গোপন, তিনি প্রকাশ্য।” ওহীয়ে মাতলু এবং ওহীয়ে গাইরে মাতলু উভয় প্রকারের ওহীর মাধ্যমেই আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাঃ এর শানে উল্লেখিত নামগুলো বর্ননা করেছেন।

রাসূল সাঃকে الاول প্রথম বলা হয় কেননা আল্লাহ পাক আসমান যমীনে যা কিছু আছে সকল কিছুর পূর্বে রাসূল সাঃকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন। মাদারিজুন নুবুয়্যাত কিতাবের মধ্যে এসছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, اول ما خلق الله نورى “আল্লাহ পাক সর্ব আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।”  আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ থেকে সমুদয় রুহকে বের করে যখন ঘোষনা দিয়েছিলন أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ “আমি কি তোমাদের রব নই।” তখন بَلَى বলে যিনি সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ। শুধু তাই নয় সর্বপ্রথম তাঁকেই নুবুয়্যাত দান করা হয়েছে। দালায়েলুন নুবুয়্যাত কিতাবের মধ্যে এসছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, إني عبد الله وخاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته “নিশ্চই আমি আল্লাহ বান্দা শেষ নবী তখনও নবী যখন আদম ধুলোর মাটিতে মিশেছিল।” প্রশ্ন হতে পারে যে নুবুয়্যাত তো একটি গুন। এই গুনে যিনি গুনান্বিত হবেন তাঁর বিদ্যমান থাকা জরুরী। এছাড়া নবুয়াতের জন্য চল্লিশ বছর নির্ধারিত। এমতাবস্থায় রাসূল সাঃ প্রেরিত হওয়ার পূর্বেই কিরুপে নবী মনোনীত হয়ে গেলেন? তখন তো তিনি জন্মগ্রহনও করেন নি এবং প্রেরিতও হন নি। উত্তরে বলা যায় আল্লাহ তায়ালা দেহ সৃষ্টি করার পূর্বে রুহ সৃষ্টি করেছেন। তাই উল্লেখিত হাদীসে নবী কারীম সাঃ এর পবিত্র রুহ অথবা হাকীকত তথা স্বরুপের দিকে ইশারা হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সকল স্বরুপ “আসল” তথা আদিকালে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি যখন ইচ্ছা করেন এ সকল স্বরুপের মধ্য থেকে কোন একটিকে অস্তিত্ব জগতে আনয়ন করেন। এসব স্বরুপের সমাগ্রিক উপলব্দি করতে আমরা অক্ষম। তবে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ সে নেয়ামত দান করেন তার কথা ভিন্ন। নবী কারীম সাঃ এর পবিত্র স্বরুপ আদম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। এবং তাকে নুবুয়াতের গুনে ভুষিত করেছেন। তাই তিনি তখনই নবী হয়ে যান।

আল্লাহ পাক সকল নবী রাসূলদের নিকট থেকে মুহাম্মদ সাঃ নুবুয়্যাতের উপর স্বীকৃতি নিয়েছেন। তাই তিনি নবীদের নবী। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ “স্মরন করুন যখন আমি নবীগনের কাছ থেকে তাদের অঙ্গীকার গ্রহন করলাম।” সকল নবীগন উনার ইমামতিতে সালাত আদায় করেছেন তাই তিনি “ইমামুল আম্বীয়া”। এবং উনার মাধ্যমেই নবুয়াতের ধারাকে সমাপ্ত করেছেন। শুধু তাই নয় আল্লাহ পাক অন্যান্য নবীদেরকে নাম ধরে সম্বোধন করলেও রাসূল সাঃকে নাম ধরে তথা ইয়া মুহাম্মদ বলে ডাক দেন নাই। তিনি কুরআনে রাসূল সাঃকে  ইয়া আয়্যুহাল মুযযাম্মিল, ইয়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির, ইয়া আয়্যুহান নাবিয়্যু বলে সম্বোধন করেছেন।

সর্বপরি বলতে হয় আল্লাহ পাক বান্দার জন্য তাঁর প্রতি মুহাব্বতের নিদর্শন হিসেবে রাসূল সাঃ এর মুহাব্বত ও অনুসরনকেই শর্ত মনোনীত করে রাসূল সাঃ মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। অতএব আমাদের প্রার্থনা তিনি অন্তরে রাসূল সাঃ এর ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। আমীন

1 টি মন্তব্য: