শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬

সুন্নাত ও বিদয়াত প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি নিরসন



সুন্নাত ও বিদয়াত পরস্পর বিরোধী বিষয়। এই বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। সুন্নাত ও বিদয়াতের প্রকৃত পরিচয় অনুধাবন করতে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হচ্ছি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রত্যেকের স্বচ্ছ ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। নতুবা বিভ্রান্তির বেড়জালে পতিত সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্নাত ও বিদয়াতের প্রকৃত পরিচয় জানতে হলে যে কোন একটি সনাক্ত করতে হবে। প্রথমত কাকে সনাক্ত করব? দুটি বিষয়ের মধ্যে মৌলিক বিষয় হলো সুন্নাত। বিদয়াত বুঝতে হলে সর্বপ্রথম সুন্নাতের সংজ্ঞাকে বুঝতে হবে। কেননা রাসূল সাঃ সুন্নাত ও বিদয়াত সংক্রান্ত হাদীসগুলোতে প্রথম সুন্নাতের তারপর বিদয়াতের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন রাসূল সাঃ বলেছেন, فَعَلَيكُمْ بِسُنَّتِي وسُنَّةِ الخُلفاء الرَّاشدينَ المهديِّينَ ، عَضُّوا عليها بالنَّواجِذِ ، وإيَّاكُم ومُحْدَثاتِ الأمور ، فإنَّ كُلَّ بِدعَةٍ ضَلالةٌ  “তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আকড়ে ধর। মাড়ির দাত দিয়ে আকড়ে ধর। এবং নতুন উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকো। কেননা সকল নতুন বিষয় পথভ্রষ্টতা।” কেউ কেউ বিদয়াতকে বুঝার জন্যে এমন সংকীর্ন পথে পা বাড়িয়েছেন যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হয়নি। ফলে এমন কিছু দলীল প্রমানের সাথে সংঘর্ষ বাধিয়েছেন যা সমাজে ফিতনার সৃষ্টি করেছে।

সুন্নাত শব্দটি বিভিন্ন পরিভাষায় পৃথক পৃথক অর্থ হয়। হাদীস বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় সুন্নাত হচ্ছে রাসূল সাঃ এর মুখের কথা, কাজ, সমর্থন ও অনুমোদনের বর্ননা। যাকে প্রচলিত ভাষায় হাদীস বলা হয়ে থাকে। ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় সুন্নাত এমন কাজকে বলা হয় যা ফরজ বা ওয়াজীব নয় বটে কিন্তু রাসূল সাঃ তা প্রায়ই করতেন। আর আমাদের আলোচ্য বিষয়ে যে সুন্নাত তার অর্থ হলো নিয়ম পদ্ধতি, রীতি-নীতি। রাসূল সাঃ এর কর্ম নির্দেশ পালনে ও বর্জনে তাঁর প্রদর্শিত পন্থা। অর্থাৎ কোন বিষয় গ্রহন ও বর্জন করার ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। আর সেটাই খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ। তাই জীবন পরিক্রমায় নতুন কোন বিষয়ের অবতারন হলে পবিত্র সুন্নাহর ছাঁচে ফেলে পরিমাপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। পরিমাপে উত্তীর্ন হলে গ্রহন নতুবা পরিত্যাগ করতে হবে। পরিমাপে অনুত্তীর্ন বিরোধপূর্ন বিষয়গুলোকেই বলা হয় বিদয়াত। এবার আসুন রাসুল সাঃ নতুন কোন বিষয় সামনে আসলে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন হাদীসের আলোকে তা জানার চেষ্টা করি।

বুখারী শরীফের হাদীস “রেফাহ বিন রাফে থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর পিছনে নামায পড়তাম। তিরি রুকু থেকে মাথা উঠাবার সময় বলতেন, سمع الله لمن حمده তখন তাঁর পিছনে দাড়ানো একজন সাহাবী বলে উঠল ربنا ولك الحمد حمدا طيبا مباركا فيه নামায শেষ করে রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন অতিরিক্ত নতুন কথাগুলো কে বলেছে? সাহাবী বলল আমি। রাসূল সাঃ বললেন আমি দেখলাম ত্রিশজন ফেরেশতা প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে কে আগে সওয়াবগুলো লিখবে?” এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, সাহবী অতিরিক্ত যে দোয়াটি পাঠ করেছিলেন তা রাসূল সাঃ এর শেখানো কোন দোয়া ছিল না। সাহাবী নিজ থেকেই তা পড়ে ছিলেন। তাই এটি একটি নতুন কাজ। আর এ বিষয়ে রাসূল সাঃ সাহাবীকে উৎসাহিত করলেন যে, তুমি যে অতিরিক্ত দোয়াটি পাঠ করেছ তার সওয়াব লেখার জন্যে ফেরেশতারা প্রতিযোগীতা করছে। এ কাজটি শরীয়াতের বিরোধী ছিল না। অতএব প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এমন নতুন কাজ যা রাসূল সাঃ এর শেখানো পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়, বিরোধপূর্ন নয় তা পরিত্যজ্য, প্রত্যাখ্যাত হতে পারে না। বরং তা কল্যানকর এবং বৈধ। এধরনের কিছু আমল হলো মিলাদ কিয়াম, হাত তুলে মুনাজাত, আদব রক্ষা করে বিভিন্ন তরীকায় যিকির আযকার, মুরাকাবা মুশাহাদা ইত্যাদি।

শুধু তাই নয় এ ধরনের উত্তম পদ্ধতি প্রচলনের ব্যাপারে রাসূল স্বয়ং নিজেই উৎসাহিত করেছন। মুসলিম শরীফে এসছে, من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها “যে ব্যক্তি ইসলামে উত্তম কিছুর প্রচলন করল সে তার বিনিময়ে সওয়াব পাবে।” হাদীসে বহু প্রমান রয়েছে যে কতিপয় সাহাবী এমন এমন কিছু দোয়া, আমল, যিকির করতেন যা ইতিপূর্বে রাসূল সাঃ করেন নি বা করতে বলেন নি। এগুলো তাঁদের মনের গভীর বিশ্বাস থেকে ভালো মনে হয়েছে তাই করেছেন। পরবর্তীতে রাসূল সাঃ তা অনুমোদনও করেছেন। এ ধরনের ভালো কাজের ব্যাপারে আল্লাহ পাক কুরআনে উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ  “তোমরা ভালো কাজ করলে সম্ভবত সফলকাম হবে।”

বিদয়াত হলো ঐ সকল নতুন কাজ যা মানুষকে অকল্যান, গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। বিদয়াত আকীদাগত ও আমলগত উভয় প্রকারের হতে পারে। আকীদাগত বিদয়াত মু’মিনের ঈমানকে নষ্ট করে দেয়। যেমন, খারেজী, রাফেজী, মু’তাজিলা, কাদিয়ানী, শিয়া এবং কট্টরপন্থী লা মাজহাবী। আমলগত বিদয়াত আমলের সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে। তাই আকীদাগত বিদয়াত থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। এ ধরনের কতিপয় বিদয়াত হলো আল্লাহকে দৈহিক আকৃতিতে বিশ্বাস করা, নবী রাসূলগন কবরে জীবিত তা অস্বীকার করা, রাসূল রওজা শরীফ জিয়ারত করাকে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান করা, তাকলীদ ও তাসাউফকে কুফুরী মনে করা, কবরকে সেজদা করা ইত্যাদি। আল্লাহ আমাদেরকে বিদয়াত থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

শানে রেসালাত প্রেক্ষিত রাসূল সাঃ এর মর্যাদা



আল্লাহ পাক পৃখিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরন করেছিলেন তাদের মধ্যে কাউকে কোন একটি দেশের জন্যে আবার কেউ কোন একটি সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াতের দায়িত্ব সহ প্রেরিত হয়েছেন। কিন্তু মুহাম্মদ সাঃকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, আল্লাহর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল আলোরুপে প্রেরন করেছিলেন। এবং তাঁকে দান সীমাহীন মর্যাদা। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে নিজের প্রশংসা করতে গিয়ে এমন কিছু গুনবাচক নাম বর্ননা করেছেন যেগুলো রাসূল সাঃ এর প্রশংসা করতে গিয়ে ব্যবহার করা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ “তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি গোপন, তিনি প্রকাশ্য।” ওহীয়ে মাতলু এবং ওহীয়ে গাইরে মাতলু উভয় প্রকারের ওহীর মাধ্যমেই আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাঃ এর শানে উল্লেখিত নামগুলো বর্ননা করেছেন।

রাসূল সাঃকে الاول প্রথম বলা হয় কেননা আল্লাহ পাক আসমান যমীনে যা কিছু আছে সকল কিছুর পূর্বে রাসূল সাঃকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন। মাদারিজুন নুবুয়্যাত কিতাবের মধ্যে এসছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, اول ما خلق الله نورى “আল্লাহ পাক সর্ব আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।”  আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ থেকে সমুদয় রুহকে বের করে যখন ঘোষনা দিয়েছিলন أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ “আমি কি তোমাদের রব নই।” তখন بَلَى বলে যিনি সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ। শুধু তাই নয় সর্বপ্রথম তাঁকেই নুবুয়্যাত দান করা হয়েছে। দালায়েলুন নুবুয়্যাত কিতাবের মধ্যে এসছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, إني عبد الله وخاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته “নিশ্চই আমি আল্লাহ বান্দা শেষ নবী তখনও নবী যখন আদম ধুলোর মাটিতে মিশেছিল।” প্রশ্ন হতে পারে যে নুবুয়্যাত তো একটি গুন। এই গুনে যিনি গুনান্বিত হবেন তাঁর বিদ্যমান থাকা জরুরী। এছাড়া নবুয়াতের জন্য চল্লিশ বছর নির্ধারিত। এমতাবস্থায় রাসূল সাঃ প্রেরিত হওয়ার পূর্বেই কিরুপে নবী মনোনীত হয়ে গেলেন? তখন তো তিনি জন্মগ্রহনও করেন নি এবং প্রেরিতও হন নি। উত্তরে বলা যায় আল্লাহ তায়ালা দেহ সৃষ্টি করার পূর্বে রুহ সৃষ্টি করেছেন। তাই উল্লেখিত হাদীসে নবী কারীম সাঃ এর পবিত্র রুহ অথবা হাকীকত তথা স্বরুপের দিকে ইশারা হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সকল স্বরুপ “আসল” তথা আদিকালে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি যখন ইচ্ছা করেন এ সকল স্বরুপের মধ্য থেকে কোন একটিকে অস্তিত্ব জগতে আনয়ন করেন। এসব স্বরুপের সমাগ্রিক উপলব্দি করতে আমরা অক্ষম। তবে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ সে নেয়ামত দান করেন তার কথা ভিন্ন। নবী কারীম সাঃ এর পবিত্র স্বরুপ আদম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। এবং তাকে নুবুয়াতের গুনে ভুষিত করেছেন। তাই তিনি তখনই নবী হয়ে যান।

আল্লাহ পাক সকল নবী রাসূলদের নিকট থেকে মুহাম্মদ সাঃ নুবুয়্যাতের উপর স্বীকৃতি নিয়েছেন। তাই তিনি নবীদের নবী। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ “স্মরন করুন যখন আমি নবীগনের কাছ থেকে তাদের অঙ্গীকার গ্রহন করলাম।” সকল নবীগন উনার ইমামতিতে সালাত আদায় করেছেন তাই তিনি “ইমামুল আম্বীয়া”। এবং উনার মাধ্যমেই নবুয়াতের ধারাকে সমাপ্ত করেছেন। শুধু তাই নয় আল্লাহ পাক অন্যান্য নবীদেরকে নাম ধরে সম্বোধন করলেও রাসূল সাঃকে নাম ধরে তথা ইয়া মুহাম্মদ বলে ডাক দেন নাই। তিনি কুরআনে রাসূল সাঃকে  ইয়া আয়্যুহাল মুযযাম্মিল, ইয়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির, ইয়া আয়্যুহান নাবিয়্যু বলে সম্বোধন করেছেন।

সর্বপরি বলতে হয় আল্লাহ পাক বান্দার জন্য তাঁর প্রতি মুহাব্বতের নিদর্শন হিসেবে রাসূল সাঃ এর মুহাব্বত ও অনুসরনকেই শর্ত মনোনীত করে রাসূল সাঃ মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। অতএব আমাদের প্রার্থনা তিনি অন্তরে রাসূল সাঃ এর ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। আমীন

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

Terrorism is not supported by Islam.


Islam is a universal religion. Muhammad (peace be upon him) has been sent as a mercy to the worlds. The motto of Islam is equality and tolerance. The freedom of expression is the beauty of Islam.
Islam has not been preached by any type of terrorist activity. Islam has attracted human being to its truth and lamplight. Muslims have been faced with some war. But the war intended was not to force anyone to be Muslim. It is a systematic approach in the interests of national peace and security. There is no analogy in the earth people who have fought to save their state securities. So there is no chance to say these militant activities are illegal.
The militancy is the important world's agenda. Some of the militant group is conducting illegal terrorist activities in the name of Jihad that is not supported by Islam. This is completely invented their own thoughts and the harvest of distorted mentality. Islam is not being established in this way. Terrorism is the great sin in Islam. Prophet Muhammad said المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده "true Muslim is the person whose face and hands other Muslims are safe from."

Jihad is a very important worship in Islam. It is directed by systematic methods. It is the president responsibility in the Muslim state to call Jihad.  Almost all countries of the world, democracy are being practiced. There is no Muslim caliph in the world to taking the initiative of jihad. In this circumstance who will direct jihad? Terrorist organization’s all activities in the name of Islam are illegal. Islam is not giving right particularly any single organization to call Jihad with weapons.  So it is clear as sunlight terrorism and emphasis are not places in Islam.

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬

ইসলাম কি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচারিত?


ইসলাম এক সার্বজনীন ধর্ম। রাসূল সাঃকে পাঠানো হয়েছে সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত স্বরুপ। ইসলামের মূলমন্ত্র হলো সাম্য, সহিষ্ণুতা এবং সৌভ্রাতৃত্ব। সাম্যের চিরন্তন বানী হলো ইসলামের শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য। সৌভ্রাতৃত্বের অন্তরঙ্গ আবেদন এর প্রাণস্বরুপ। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার ইসলামের সৌন্দর্য।

ইসলাম ধর্ম কোন প্রকার ভয় ভীতি প্রদর্শন তথা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচারিত হয় নি। অমানিশার অন্ধকারে যেমন পতঙ্গরাজি কোন অজানিত টানে প্রজ্জলিত দীপালোকের দিকে ছুটে আসে, তেমনি সত্য-সনাতন ইসলামের জ্যেতি ও উদারতা ধর্মান্বেষী মানব মাত্রেই প্রানকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিল। ঘটনাচক্রের আর্বতনে মুসলমানগণকে বহু যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু এটা স্থির নিশ্চিত যে, কাউকেও বলপূর্বক মুসলমান করা এই সমস্ত যুদ্ধ বিগ্রহের উদ্দেশ্যে মোটেই ছিল না। এই যুদ্ধবিগ্রহকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা অবৈধ জঙ্গী তৎপরতা বলার কোন সুযোগ নেই। এটি রাষ্ট্রীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক গৃহিত পদক্ষেপ। ধরাপৃষ্ঠে এমন কোন জাতির উপমা নেই যারা রাষ্ট্রীয় জীবন রক্ষা করতে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয় নি অথবা অন্ততঃপক্ষে যুদ্ধবিগ্রহ সমর্থন করে না। ইসলামে যুদ্ধ তথা জিহাদের নীতিমালা স্থান পাওয়ার কারন এটি পরিপূর্ন ধর্ম। আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ন করে দিলাম।” তাই মানব জীবনে যত রকম অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে তৎসমুদয়ের সুস্পষ্ট ব্যবস্থাই ইসলামে রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হলো জঙ্গীবাদ। কতিপয় জঙ্গী সংগঠন ইসলাম প্রতিষ্ঠার ধোঁয়া তুলে জিহাদের নামে যে অবৈধ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা ইসলাম সমর্থিত নয়। এটি সম্পূর্ন তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা এবং বিকৃত মানসিকতার উদ্ভাবিত ফসল। যা দেশ ও জাতির নিরাপত্তাকে বিঘিœত করছে। এই পদ্ধতিতে কর্ষিকালেও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা ইসলামে সন্ত্রাস মহাপাপ। পিতা পুত্র, স্বামী স্ত্রী, মালিক ভৃত্য, এবং মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা প্রমান করে সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ব শান্তি  প্রতিষ্ঠা ও তা বজায় রাখাই এ সকল বিধি বিধানের মৌলিক উদ্দেশ্য। রাসূল সাঃ বলেছেন, المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده “প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ।” এ রকম মহান আদর্শ দিয়েই রাসূল সাঃ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

জেনে রাখা প্রয়োজন জিহাদ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত। এটি নিয়ম তান্ত্রিক পদ্ধতি মুতাবেক পরিচালিত হয়। জিহাদের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব ইমামুল মুসলিমীন তথা মুসলিম খেলাফতের খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সকল রাষ্ট্রেই গনতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। ইসলামের খেলাফত তন্ত্র ধরাপৃষ্ঠের কোথাও অবশিষ্ট নেই। বিধায় জিহাদের উদ্যোগ নেয়ার মত কোন খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান নেই। এমতবস্থায় জিহাদ পরিচালনা করবে কে? তাই যে সকল সংগঠন জিহাদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সম্পূর্নরুপে অবৈধ। কোন একক সংগঠনের অস্ত্রের মাধ্যমে জিহাদ পরিচালনা করার অধিকার ইসলাম দেয় নাই। কারন রাসূল সাঃ মক্কী জীবনে একটি যুদ্ধও পরিচালনা করেন নি। সকল যুদ্ধ মদীনার রাষ্ট্র গঠন করার পরে সংগঠিত হয়।

তদুপরি স্বচ্ছ ধারনার অভাবে কেউ কেউ রাসূল সাঃ এর পরিচালিত কিছু যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনায় লিপ্ত হন। তেমনি একটি হলো বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ। তাদের প্রশ্ন রাসূল সাঃ কেমন করে বনু মুস্তালিকের উপর অতর্কিত হামলা করে তাদের সকল যোদ্ধাসহ পুরুষদেরকে হত্যা করে ফেললেন। এটা কি সন্ত্রাসী হামলা নয়? উত্তরে বলা যায় ইসলামের জিহাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো মুসলিম বাহিনীর বিপক্ষে কোন শক্তি যদি অস্ত্রধারন করতে ইচ্ছা পোষন করে তাহলে প্রথমত তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে। যদি তারা সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে দ্বিতীয়ত কর প্রদান করত মুসলামানদের সাথে চুক্তি করতে আহবান করা হবে। যদি তাতেও সম্মত না  হয়ে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে চায় তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, فَإِنْ قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ “যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো।” বনু মুস্তালিকের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাদের কাছে পূবেই ইসলামের সকল দাওয়াত পৌছে গিয়েছিল। রাসূল সাঃ জানতে পারেন হারিছ ইবনে আবূ যিরারের নেতৃত্বে বনূ মুস্তালিক গোত্র মুসলমানদের দাওয়াত অস্বীকার করে যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই রাসূল সাঃ ৫ম হিজরী সনে ০২ শাবান ৭০০ সাহাবী নিয়ে বনূ মুস্তালিকের অভিমুখে রওয়ানা হয়ে অতর্কিত হামলা করার নির্দেশ করেন তাতে তাদের সকল ব্যাক্তি নিহত হয়। তাই এই আক্রমনকে সন্ত্রাসী হামলা বলার কোন সূযোগ নেই।

ইসলামের তাত্ত্বিক দর্শন এবং এর ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকে দৃষ্টিপাত করলে এ কথা সূর্যালোকের মতো সুস্পষ্ট যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সন্ত্রাস, ভীতি প্রদর্শন ও জোর জবরদস্তীর কোন স্থান নেই। যার প্রমান মিলে স্বামী বিবেকানন্দের লেখনীতে। তিনি লিখেন, “[ভারতে] মুসলিম শাসনের নিকট আমরা ঋনী। মুসলিম শাসন এসেছিল এক মহান আর্শীবাদ রুপে। কোন কোন গোষ্ঠীর উপভোগকৃত সুযোগ সুবিধার ধ্বংসকারীরুপে। [ভারতের] দরিদ্র এবং দলিতদের মুক্তিবার্তা নিয়েই মুসলমানদের ভারত বিজয় সংঘটিত হয়েছিল। এ কারনেই ভারতের এক পঞ্চমাংশ জনসমষ্টি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। তরবারীর ভুমিকা এক্ষেত্রে ছিল গৌণ। কেউ যদি বলেন এ জন্য দায়ী তরবারী এবং আক্রমন তাহলে তা হবে মস্ত পাগলামী।”

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক কেন?

আসছে ঈদুল ফিতর আর শুরু হতে যাচ্ছে ঈদের নামাযের তাকবির সংখ্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত কিছু তাকবির দিতে হয়। কেউ বলেন ছয় তাকবির কেউ বার তাকবির বলে থাকেন। উভয়ে তাদের স্বপক্ষে জোরালো দলীল পেশ করে। একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টায় পিছিয়ে থাকার নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় আলেমদের এ ধরনের ঘৃন্য আচরন ইসলামের সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তবুও কেন আমরা এই বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছি।
ইমাম আবু হানিফার ফতোয়া মতে, দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরীমার পর ছানা পাঠ করে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে। এরপর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ে রুকু সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ে পুনরায় অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিবে চতুর্থ তকবির বলে রুকূতে যাবে। এ হিসাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা হয় ছয়টি। এ প্রসঙ্গে উনার দলীল রাসূল সাঃ এর হাদীস যা সহীহ সূত্রে মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, মু’জামুল কাবীর এর মধ্যে এসছে, فقال بن مسعود يكبر أربعا ثم يقرا ثم يكبر فيركع ثم يقوم في الثانية فيقرا ثم يكبر أربعا بعد القراءة “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলে, চারটি তাকবির দেয়া হবে এরপর কিরাত পড়বে রুকু করবে পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত পড়ার পর চারটি তাকবির দিবে।” উল্লেখ্য প্রথম রাকাতে চার তাকবিরের ব্যাখ্য তাকবিরে তাহরীমা সহ অতিরিক্ত তিনটি তাকবির। আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার তাকবির সহ আরো তিনটি তাকবির। মোট দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির।

অপরদিকে কারো কারো মতে, দুই রাকাত ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবিরের সংখ্যা বার। তাদের দলীল হচ্ছে হাসান সূত্রে বর্নিত তিরমীযি ও ইবনে মাজা শরীফের হাদীস أن النبي صلى الله عليه و سلم كبر في العيدين في الأولى سبعا قبل القراءة وفي الآخرة خمسا قبل القراءة “রাসূল সাঃ দুই রাকাত ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতে কিরাত পড়ার পূর্বে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচটি তাকবির দিতেন।” 

বার তাকবিরের পক্ষের কিছু আলেম অত্যন্ত কঠোর ভাবে হুশিয়ারি করেন যে, ছয় তাকবিরের পক্ষে একটি জয়ীফ হাদীস বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমান দেখাতে পারবে না। অথচ ছয় তাকবিরের পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান (উপোরোক্ত হাদীস)। শুধু তাই নয় বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর উপর আমল করেছেন। তাহলে তাদের বক্তব্য কি উক্ত হাদীসকে অস্বীকার করার শামিল নয়? যা সম্পূর্নরুপে কুফুরী।

উমদাতুল ফিকহ এর ২য় খন্ডে এসছে ঈদের নামাযের দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলার স্থলে ইমাম যদি আরো বেশী সংখ্যক তাকবীর বলেন তাহলে তেরবার পর্যন্ত ইমামের অনুসরন করা হবে। যদি তের বারের অধিক বলা হয় তাহলে ইমামের ভুল বলে পরিগনিত হবে। তাতে ইমামের অনুসরন করা হবে না। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ঈদের নামায ছয় তাকবির দিয়ে আদায় করলে যেমন শুদ্ধ হবে তেমনি বার তাকবির দিয়ে আদায় করলেও ভুল হবে না। তাই ফিতনা হতে বিরত থেকে যেখানে ইমাম যেভাবে আদায় করেন সেভাবে আদায় করা সর্বোত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা

ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই। রাসূল সাঃ বৈরাগ্যবাদকে নিষিদ্ধ করেছেন। তাই বলে কি ইসলামে তাসাউফ সাধনা তথা আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য কোন প্রচেষ্টার ব্যবস্থা নেই? কুরআন প্রমান দিচ্ছে আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى () وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى  “সেই ব্যক্তি সফলকাম যে পরিশুদ্ধতা অর্জন করেছে। নামায আদায়ের পাশাপাশি তার রবের যিকির করে।” আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য যিকিরের সাধনার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا () نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا “উঠ রাত্রি জাগরন করো কিছু অংশ, অর্ধরাত্রি অথবা তদাপেক্ষা অল্প।” প্রবৃত্তির বিরোধীতা করে শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে ইবাদতে মগ্ন হতে যে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানেও তাসাউফ সাধনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অতএব স্পষ্ট প্রমানিত যে, ইসলামে তাসাউফের সাধনা আছে। যদি কেউ বলে থাকে ইসলামে আত্মশুদ্ধির সাধনার কোন স্থান নেই তাহলে ইসলামকে অপূর্ন হিসেবে আখ্যায়িত করল। কেননা আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ “আজ আমি পরিপূর্ন করেছি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম)। ” আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ন ক্রটিমুক্ত। অতএব এ ধরনের কথা বলার কোন সুযোগ নেই। এটি নেহায়েত কুফুরীর শামিল। 

অন্যান্য ইবাদতের (নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত) মত ই’তিকাফ এক প্রকার তাসাউফ সাধনা। উপরোক্ত আয়াতগুলি থেকে বুঝা যায় প্রত্যাহিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে রাতের অন্ধকারে একান্ত তাঁরই ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে তাসাউফ সাধনার যেভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তেমনি বছরে একবার রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ঘরে নিজেকে বন্দী রেখে অহোরাত্র তারই দ্বারে পড়ে থেকে দুনিয়াবী কলুষতা থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ই’তিকাফ বলা হয়। রমজানের দিনের বেলায় স্ত্রী সম্ভোগ নিষিদ্ধ হলেও রাতের বেলায় নিষিদ্ধ নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় দিনে রাতে সদা সর্বদা তা নিষিদ্ধ। এ থেকে প্রমানিত হয় ই’তিকাফকারীর জন্য দুনিয়াবী চিন্তা চেতনা ও পার্থিব কর্তব্য পালন নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ “তোমরা ই’তিকাফ অবস্থায় নারীদের কাছে গমন করিও না।” সংসার সংশ্রব থেকে নিজেকে পৃথক করে মসজিদে সর্বক্ষন আল্লাহর দাসত্বে নিযুক্ত থাকতে হবে। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করা যাবে। কিন্তু  একে মোটেও নির্জনবাস বলা যায় না। কেননা এটি পাড়ার জামে মসজিদে করতে হয়। 

দুনিয়ার মুহাব্বত অন্তর থেকে বের করার প্রশিক্ষন নেয়ার সূবর্ন সুযোগ হলো ই’তিকাফ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পাক যাতের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন হয়। তামাম সৃষ্টির ভালোবাসার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের সঙ্গে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সকল বাধন ছিন্ন করে একমাত্র তাঁরই ধ্যানে ডুবে থাকা যায়। এজন্য রাসূল সাঃ ইচ্ছাকৃতভাবে ই’তিকাফ পরিত্যাগ করেন নি। তাই আমাদেরও উচিত রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। 

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?সিয়াম ও তারাবীহ পরস্পর সম্পূরক। একই বিষয়ের এপিঠ-ওপিঠ। সিয়াম ভোগ বিলাস ত্যাগের দিকে আহবান করে। তারাবীহ তথা নামায আল্লাহর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করে। তাই রমযান মাসে সিয়াম সাধনার পাশপাশি তারাবীহের নামায আদায় করতে হবে এ বিষয়ে সকল ওলামায়ে কেরামগন ঐক্যমত। কিন্তু বির্তকের বিষয় হলো তারাবীহের নামাযের কত রাকাত? ৮ রাকাত না ২০ রাকাত। এর উপর ভিত্তি করে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে মতবিরোধ। প্রত্যেকেই তাদের মতের উপর অবিচল। সাধারন মানুষের প্রশ্ন এই বির্তকের অবসান কোথায়?

যারা আট রাকাত নামাযের পক্ষে তারা দলীল পেশ করে থাকেন বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাতুত তারাবীহ এর যে মধ্যে হাদীসটি এসছে সেটি, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্নিত তিনি আয়েশা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন রমযান মাসে (রাতে) রাসূল সাঃ এর নামায কেমন ছিল? আয়েশা রাঃ জবাব দিলেন, ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة “রামযানে এবং রমযান ব্যতীত অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী পড়তেন না।” এ হাদীসের ভাষ্যই প্রমান করছে এটি তারাবীর নামাযের দলীল নয়। কেননা রমযানের বাইরে তারাবীহ নেই। অপরদিকে যারা বিশ রাকাত নামাযের পক্ষে তাদের দলীল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত হাদীস। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা এর কিতাবুস সালাত এর মধ্যে এসছে, عن بن عباس إن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة والوتر “ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত রাসূল সাঃ রমাদান মাসে বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।” এখন প্রশ্ন কত রাকাত পড়া যুক্তিযুক্ত।

এক জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহের নামায আদায়ের প্রচলন শুরু হয় হযরত উমর রাঃ এর খিলাফত কাল থেকে। তিনি উবাই ইবনে কা’ব রাঃকে ইমাম নির্দিষ্ট করে এই জামাত শুরু করেন। অবশ্যই উনি নিজের পক্ষ থেকে এটি আবিষ্কার করেন নি। তাঁর সাথে বিদ্যমান কোন মূল দলীলের ভিত্তিতে রাসূল সাঃ এর নিকট থেকে অবগতির সূত্রেই তা করেছিলেন। কেননা তৎকালীন সময়ের রাসূল সাঃ সাহাবীগনের কেউ এ বিষয়ে অসম্মতি প্রকাশ করেন নি। পরবর্তী যুগের খলিফাগন, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, মুজতাহিদ ইমামগন তা অবনত চিত্তে মেনে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এও বলেছেন খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরনীয়। عليكم بسنتى و سنة الخلفاء الراشدين المهديين عضو عليها بالنواجذ “তোমরা আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরন করবে তা মজবুত করে আকড়ে ধরবে।” তাই জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায়ের প্রসঙ্গে কোন প্রকার সন্দেহ করা চরম মূর্খতার শামিল হবে।

আল্লাহ তাআলা রমযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন আর রাসূল সাঃ রাতে তারাবীহ পড়া চালু করেছেন। একে কিয়ামুল লাইলও বলা হয়। রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল এর গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে রাসূল সাঃ বলেন من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه “যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাত্রি যাপন (কিয়ামুল লাইল) করবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” কিয়ামুল লাইল দ্বারা রাতের সকল নামাযকেই বুঝায় যেমন নফল ও সুন্নাত। ফলে তাহাজ্জুদের নামাযও এর অর্ন্তভূক্ত হয়ে যায়। তাই বলে তাহাজ্জুদের নামায আর তারাবীহের নামায এক বিষয় নয়। উভয়টি পৃথক পৃথক নামায। উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামুল লাইল দ্বারা তারাবীহের নামায বুঝানো হয়েছে। এরকম মর্যাদার বর্ননা শুধুমাত্র তারাবীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। রমযান মাসে যেহেতু সকল আমলের সওয়াব অনেক বেশী তাই তারাবীহের নামায বিশ রাকাত পড়াই উত্তম। 

পরিশেষে বলা যায়, বিশ রাকাত নামাযের মধ্যে আট রাকাত আছে কিন্তু আট রাকাত নামাযের মধ্যে বিশ রাকাতের উপস্থিতি নেই। তাই বিশ রাকাত না আট রাকাত এই বিরোধীতা না করে রমযানের সময় সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলের আমলকে কবুল করে নিন। আমীন।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

আল্লাহর ওলীদের পরিচয় পাওয়া সহজ না কঠিন ?

আউলিয়া শব্দটি ওলিয়্যুন শব্দের বহুবচন। সাধারন প্রচলিত ব্যবহারে এই শব্দটির অর্থ সহচর, বন্ধু। যেমন আল্লাহ বলেন, أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ “জেনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোন ভয় নাই তাদের কোন চিন্তা নাই।”
সাধারনভাবে সকল মু’মিনগন স্ব স্ব স্তরে আল্লাহর বন্ধু। এদের মধ্যে কিছু কিছু ওলীগন বেলায়াতপ্রাপ্ত। তাঁরা রাসূল সাঃ এর আদর্শ ও চরিত্রের প্রকৃত পদানুসারী। তাঁরা দ্বীন ইসলামের খাদেম। তাদের জন্য নিজস্ব মতাদর্শ মতবাদ প্রচার করা কুফুরী। কুরআন স্বাক্ষী আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “তোমাদের জন্যে রাসূল সাঃ এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ” তাই যারা আল্লাহর বেলায়াত বা নৈকট্য পেতে চায় তাদেরকে অবশ্যই রাসূল সাঃ এর আদর্শকে গ্রহন করতে হবে। তদুপরি যারা শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী স্বীয় কোন মতবাদ প্রচার করে তাহলে তাদের বেলায়াত থাকতে পারে না। কেননা আল্লাহ বলেন, الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ  “বেলায়াত দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।” আর রাসূল সাঃ এর পাইরুবি না করলে আল্লাহ বেলায়াত দান করেন না।
রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও তার আনুগত্যের মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা নিহিত। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর মুহাব্বত অর্জন করা যায় না। কেননা আল্লাহ ঘোষনা করেন,  إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ قُلْ “হে রাসূল আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরন করো আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।” অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, যারা আল্লাহর নৈকট্যশীল বন্ধু তাঁরা আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিক এবং রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের প্রকৃত অনুসরন অনুকরনকারী। উভয়ের ভালোবাসা তাদের অন্তরে বিদ্যমান। তাই সূক্ষ্মভাবে বলা যায় এই রকম মর্যাদা সম্পন্ন ওলীদেরকে অনুসরন, অনুকরন ও আনুগত্য করলে প্রকারান্তরে রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরন ও আনুগত্য হয়। এরাই হলো ওরাছাতুল আম্বীয়া বা নবী রাসূলদের প্রকৃত উত্তরসূরী।
পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যত নবী রাসূল প্রেরন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন সার্বজনীন। তাঁরা জনসাধারনের নিকট স্বীয় পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং মু’জিযা দেখানো তাঁদের জন্য দূষনীয় ছিল না। অপরদিকে যারা আল্লাহর নিকটবর্তী অলী তাদের পরিচয়ের কোন বাহ্যিক চি‎হ্ন রাখেন নাই। এজন্য এ সমস্ত অলীদের পরিচয় লাভ করা বড়ই কঠিন। আল্লাহ তাঁর কোন কোন ওলীকে বহু কারামত দিয়েছেন, আবার কাউকে আংশিক কারামতের অধিকারী করেছেন। অন্যদিকে কাউকে আবার সম্পূর্নরুপে কারামত থেকে মুক্ত রেখেছেন। এটি একেবারেই আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত। সাথে সাথে এও বিধান করেছেন যে, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে স্বেচ্ছায় কারামত প্রকাশ করা অবৈধ। 
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ওলামায়ে কেরামদের মতে, আউলিয়াদের কারামত সত্য। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সূরা আলে ইমরানের ৩৭ নং আয়াত দলীল হিসেবে পেশ করা যায়। মারইয়াম আঃ এর অলৌকিকতা বর্ননা করে আল্লাহ বলেন হযরত যাকারিয়া আঃ যখনই মারইয়াম আঃ এর ঘরে প্রবেশ করতেন তখনই তাঁর নিকট অসময়ের ফল তথা গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালে আর শীতকালের ফল গ্রীষ্মকালে দেখতে পেতেন। কুরআনে বর্নিত আছে, لَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّى لَكِ هَذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ “যখনই যাকারিয়া তাঁর ঘরে প্রবেশ করতো তখনই তাঁর নিকট খাদ্যসম্ভার দেখতে পেত, তিরি ডেকে বলতেন হে মারইয়াম এটা কোথা থেকে প্রাপ্ত হলে। সে বলতো এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।” এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইবনে কাছীর লিখেন এটাই আল্লাহর অলীদের কারামতের দলীল। কিন্তু এক শ্রেনীর আলেম ঢালাওভাবে আউলিয়াদের কারামতকে ভ্রান্ত, ভেল্কিবাজী, যাদু ও প্রতারনা নামে আখ্যায়িত করে থাকে। এটি সত্যকে অস্বীকার করার শামিল। 
আউলিয়াদের কারামত সত্য হলেও ওলী পরিচয়ের প্রধান চিহ্ন হতে পারে না। আল্লাহর নৈকট্যশীল প্রকৃত আউলিয়াদের অন্তর শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মা’রেফাতের জ্ঞানে পরিপূর্ন। তাঁরা রাসূল সাঃ এর অনুসরন অনুকরনকারী। আল্লাহর তাওহীদের নূরে তাদের অন্তর নূরান্বিত। তাঁরা আল্লাহর রহমত ও ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত বান্দা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট তাঁরা মুখাপেক্ষী নয়। তাঁদের অন্তর সদা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত তাই তাদেরকে দর্শন মাত্রই আল্লাহর স্মরন হয়। তাঁদের সংস্পর্শ গ্রহন করলে দুনিয়ার মায়া হ্রাস পায়। আখেরাতের কথা হৃদয়ে জাগরিত হয়। আমলের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। তাঁদেরকেই প্রচলিত অর্থে পীর, মুর্শিদ, সূফী, দরবেশ নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا “অতপর তারা সাক্ষাত পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের যাকে আমি আমার দিয়েছিলাম রহমত এবং ইলমে লাদুন্নী।” (সূরা কাহাফ ৬৫) তাদের সংস্পর্ষ, শিক্ষা দীক্ষা, তা’লিম তরবিয়াত ও দোয়া নিতে পারলেই আল্লাহর নিকটবর্তী বন্ধুদের কাতারে শামিল হওয়া সম্ভব। কেননা আল্লাহ বলেন وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ “নিজেকে তুমি রাখবে তাদের সংস্পর্শে যারা সকাল সন্ধ্যা তাদের রবকে ডাকে।” (সূরা কাহাফ ২৮) এই সংস্পর্ষ গ্রহন করার অপর নাম বাইয়াত। এর লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও বন্ধুত্বের স্থান দখল করা।

বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬

সিরাতুল মুসতাকীম (সরল সহজ পথ)

সকল কিছুই দুই প্রান্ত বিশিষ্ট। এই দুই প্রান্তের উভয়টিই মন্দ। একেবারে মধ্যখানে চুলের মত সূক্ষ্ম একটি পথ আছে। যাকে আরবীতে সিরাতুল মুস্তাকীম বলে। এটি পরকালের পুলসিরাতের মত সূক্ষ্ম ও তীক্ষèধার বিশিষ্ট। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا “আর যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না, কার্পন্য করে না বরং তারা আছে দুইয়ের মাঝে। যে ব্যাক্তি ইহকালে সিরাতুল মুস্তাকীম অনুযায়ী সহজ, সরল ও মধ্যম পন্থায় চলতে অভ্যাস করেছেন তিনি পরকালে নির্ভয়ে পুলসিরাত অতিক্রম করতে পারবেন।