মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?

তারাবীহ বিতর্কের অবসান কোথায়?সিয়াম ও তারাবীহ পরস্পর সম্পূরক। একই বিষয়ের এপিঠ-ওপিঠ। সিয়াম ভোগ বিলাস ত্যাগের দিকে আহবান করে। তারাবীহ তথা নামায আল্লাহর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করে। তাই রমযান মাসে সিয়াম সাধনার পাশপাশি তারাবীহের নামায আদায় করতে হবে এ বিষয়ে সকল ওলামায়ে কেরামগন ঐক্যমত। কিন্তু বির্তকের বিষয় হলো তারাবীহের নামাযের কত রাকাত? ৮ রাকাত না ২০ রাকাত। এর উপর ভিত্তি করে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে মতবিরোধ। প্রত্যেকেই তাদের মতের উপর অবিচল। সাধারন মানুষের প্রশ্ন এই বির্তকের অবসান কোথায়?

যারা আট রাকাত নামাযের পক্ষে তারা দলীল পেশ করে থাকেন বুখারী শরীফের কিতাবুস সালাতুত তারাবীহ এর যে মধ্যে হাদীসটি এসছে সেটি, আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্নিত তিনি আয়েশা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন রমযান মাসে (রাতে) রাসূল সাঃ এর নামায কেমন ছিল? আয়েশা রাঃ জবাব দিলেন, ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة “রামযানে এবং রমযান ব্যতীত অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী পড়তেন না।” এ হাদীসের ভাষ্যই প্রমান করছে এটি তারাবীর নামাযের দলীল নয়। কেননা রমযানের বাইরে তারাবীহ নেই। অপরদিকে যারা বিশ রাকাত নামাযের পক্ষে তাদের দলীল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত হাদীস। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা এর কিতাবুস সালাত এর মধ্যে এসছে, عن بن عباس إن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة والوتر “ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত রাসূল সাঃ রমাদান মাসে বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।” এখন প্রশ্ন কত রাকাত পড়া যুক্তিযুক্ত।

এক জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহের নামায আদায়ের প্রচলন শুরু হয় হযরত উমর রাঃ এর খিলাফত কাল থেকে। তিনি উবাই ইবনে কা’ব রাঃকে ইমাম নির্দিষ্ট করে এই জামাত শুরু করেন। অবশ্যই উনি নিজের পক্ষ থেকে এটি আবিষ্কার করেন নি। তাঁর সাথে বিদ্যমান কোন মূল দলীলের ভিত্তিতে রাসূল সাঃ এর নিকট থেকে অবগতির সূত্রেই তা করেছিলেন। কেননা তৎকালীন সময়ের রাসূল সাঃ সাহাবীগনের কেউ এ বিষয়ে অসম্মতি প্রকাশ করেন নি। পরবর্তী যুগের খলিফাগন, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, মুজতাহিদ ইমামগন তা অবনত চিত্তে মেনে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এও বলেছেন খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরনীয়। عليكم بسنتى و سنة الخلفاء الراشدين المهديين عضو عليها بالنواجذ “তোমরা আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অনুসরন করবে তা মজবুত করে আকড়ে ধরবে।” তাই জামাআতে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায়ের প্রসঙ্গে কোন প্রকার সন্দেহ করা চরম মূর্খতার শামিল হবে।

আল্লাহ তাআলা রমযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন আর রাসূল সাঃ রাতে তারাবীহ পড়া চালু করেছেন। একে কিয়ামুল লাইলও বলা হয়। রমযান মাসে কিয়ামুল লাইল এর গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে রাসূল সাঃ বলেন من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه “যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাত্রি যাপন (কিয়ামুল লাইল) করবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” কিয়ামুল লাইল দ্বারা রাতের সকল নামাযকেই বুঝায় যেমন নফল ও সুন্নাত। ফলে তাহাজ্জুদের নামাযও এর অর্ন্তভূক্ত হয়ে যায়। তাই বলে তাহাজ্জুদের নামায আর তারাবীহের নামায এক বিষয় নয়। উভয়টি পৃথক পৃথক নামায। উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামুল লাইল দ্বারা তারাবীহের নামায বুঝানো হয়েছে। এরকম মর্যাদার বর্ননা শুধুমাত্র তারাবীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। রমযান মাসে যেহেতু সকল আমলের সওয়াব অনেক বেশী তাই তারাবীহের নামায বিশ রাকাত পড়াই উত্তম। 

পরিশেষে বলা যায়, বিশ রাকাত নামাযের মধ্যে আট রাকাত আছে কিন্তু আট রাকাত নামাযের মধ্যে বিশ রাকাতের উপস্থিতি নেই। তাই বিশ রাকাত না আট রাকাত এই বিরোধীতা না করে রমযানের সময় সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলের আমলকে কবুল করে নিন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন